
দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আবারও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে দেশটি। তবে এবার তা আগের মতো নয়—আরও কঠোর শর্তের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর জন্য নতুন করে ১০টি শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে এই শর্তগুলো পূরণে সক্ষম এজেন্সির তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
নতুন শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে— রিক্রুটিং এজেন্সির অন্তত পাঁচ বছরের সফল কার্যক্রমের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, কমপক্ষে তিন হাজার কর্মী বিদেশে পাঠানোর প্রমাণ দিতে হবে, তিনটি দেশে কর্মী প্রেরণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং অন্তত ১০ হাজার বর্গফুট আয়তনের স্থায়ী অফিস থাকতে হবে।
অভিবাসন সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব কঠোর শর্তের ফলে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর একটি বড় অংশ বাদ পড়তে পারে এবং পুরোনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এতে সাধারণ এজেন্সিগুলোর জন্য শ্রমবাজার কার্যত বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, “এই শর্তগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবসম্মত নয়। বাংলাদেশে রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার জন্য ১০ হাজার বর্গফুট অফিসের কোনো প্রয়োজন নেই—৬০০ বর্গফুটই যথেষ্ট। এসবের মাধ্যমে পুরোনো সিন্ডিকেটকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী বিভিন্ন খাতে কর্মরত। তবে গত বছরের ৩১ মে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে নতুন কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। এর আগে ২০১৮ সালেও একই অভিযোগে দেশটি শ্রমবাজার বন্ধ করেছিল। তিন বছর পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে নতুন চুক্তির মাধ্যমে বাজার পুনরায় চালু হয় এবং ২০২২ সালের আগস্টে ১০০ অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো শুরু হয়।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এবারও যদি শ্রমবাজার উন্মুক্তভাবে চালু না করা হয়, তবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত খরচের বোঝা আবারও কর্মীদের ওপর পড়বে। তাই তারা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বাজারটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয় এবং নতুন কোনো সিন্ডিকেটের সুযোগ তৈরি না হয়।
