
বিশ্বজুড়ে চাকরির বাজারে বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। সাম্প্রতিক সময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেঞ্চার ১১ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে, তবে একই সঙ্গে তাদের কর্মীদের এআই ব্যবহারে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। এভাবেই দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তি যেমন কাজের দক্ষতা বাড়াচ্ছে, ঠিক তেমনই অনেকের চাকরিও হুমকির মুখে।
শুধু অ্যাকসেঞ্চার নয়, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও একই পথে এগোচ্ছে। আইবিএম শত শত পদ এআই দ্বারা প্রতিস্থাপন করেছে, তবে নতুনভাবে বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। অ্যামাজনও কিছু কর্মী ছাঁটাই করেছে, কিন্তু এআই টুল তৈরির টিম আরও বড় করছে। স্পষ্ট হচ্ছে, কিছু চাকরি হারছে, নতুন কাজ তৈরি হচ্ছে, আর কর্মক্ষেত্রের ধরন বদলাচ্ছে।
ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিবো কলেজ অফ বিজনেসের অধ্যাপক মুরগানা আনন্দরাজান গবেষণা করছেন, কীভাবে প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্র ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বদলাচ্ছে। তার মতে, শিক্ষার্থী এবং কর্পোরেট কর্মকর্তা দু’পক্ষই এখন জানতে চাচ্ছে—কীভাবে এআই যুগে চাকরি ধরে রাখা যায়, এবং কীভাবে কর্মীদের মধ্যে প্রযুক্তির প্রতি আস্থা তৈরি করা যায়।
সম্প্রতি দুটি জরিপ করা হয়েছে। ‘ডেটা ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড এআই রেডিনেস সার্ভে’-তে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি কোম্পানি প্রতিদিনের সিদ্ধান্তে এআই ব্যবহার করছে, কিন্তু মাত্র ৩৮ শতাংশ কর্মী পুরোপুরি প্রস্তুত। ‘কলেজ হায়ারিং আউটলুক সার্ভে’-তে দেখা গেছে, নতুন গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এআই-সম্পর্কিত দক্ষতা এখনও অনেক নিয়োগকারীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
অধ্যাপক আনন্দরাজান বলেন, ভবিষ্যতের শক্তিশালী কর্মী হবেন সেই যারা ‘হিউম্যান এআই ফ্লুয়েন্সি’ অর্থাৎ মেশিনের সঙ্গে কাজ করতে জানে, ফলাফলকে প্রশ্ন করতে পারে এবং নতুন কিছু শিখতে প্রস্তুত থাকে। সফল কোম্পানিগুলো এখন এমন কর্মী খুঁজছে যারা কৌতূহল, বিচারবুদ্ধি এবং এআই দক্ষতা একসঙ্গে ব্যবহার করতে পারে। এভাবে তৈরি হচ্ছে নতুন হাইব্রিড চাকরি, যেমন ‘এআই ট্রান্সলেটর’ এবং ‘ডিজিটাল কোচ’।
শেষ পর্যন্ত, প্রযুক্তিগত দক্ষতা আর মানবিক বিচারবুদ্ধি—দুটোই এখন নতুন যুগের সবচেয়ে বড় শক্তি। শুধুমাত্র যেসব মানুষ এ দুটো মিলিয়ে কাজে লাগাতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতে সফল হবেন।
